প্রধান শিক্ষকের বাণী
হযরত শাহজালাল (রঃ) হযরত শাহপরান (রঃ) ও চৈতন্য দেবের পূন্য পাদস্পর্শে ধন্য বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী, দুটি পাতা একটি কুড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট বিভাগের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ আমাদের এই বিদ্যাপীঠ সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, সিলেট। এ নামটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে ইতিহাস তার সোনালি কবাট খুলে দেয় একে একে। মোড়ক উন্মোচিত হয় নারী শিক্ষার এক সুলিখিত গ্রন্থের যার প্রতিটি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় লেখা আছে এ বিদ্যালয়ের কৃর্তি নারীদের সাফল্যের ইতিহাস - ঐতিহ্য, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সত্য সুন্দর আর মানবিক কল্যাণের জয়গান।
বাঙালী নারীর অচলায়তন অতিক্রমের এক শুভ অভিযাত্রা এ বিদ্যায়তন। নারীর ক্ষমতায়নের পথে শত বছরের এক অনিঃশেষ সংগ্রামের অবিস্মরণীয় জয় গাঁথায় সমৃদ্ধ এ বিদ্যালয়। ১৯০৩ সালে শ্রীমতি হেমন্ত কুমারী চৌধুরানী সমাজবাস্তবতার তীব্র ভ্রুকটি পেছনে ফেলে যেদিন প্রতিষ্ঠা করলেন নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ বিদ্যালয়। এক ঝাঁক কন্যা শিশু পা রাখলো বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায়। যাত্রা শুরু হলো নারী শিক্ষার, জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হলো তাঁরা। সেই পূর্বসুরীদের পথ ধরে আজও একবিংশ শতাব্দীতে এসে জ্ঞান আর মেধার আলোয় আলোকিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দশদিক বিদ্যালয়ে শত সহস্র শিক্ষার্থীরা। পূর্বসূরীদের সাফল্যের ধারাবাহিকতাকে পাথেয় করে পথ চলছে উত্তরসূরী। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মন্তরে চলছে এ পথ চলা যার আলোয় আলোকিত হচ্ছে পরিবার, সমাজ, দেশ। এ আলোর অনুসারীরা সীমিত থাকেনি, নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনি অঞ্চলে মেধা ও প্রজ্ঞার বৈভবে আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলেও স্থান করে নিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কেবল পাঠ্য বইয়ের সীমাবদ্ধতায় একজন শিক্ষার্থী পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে না তাই কেবলমাত্র সার্টিফিকেটধারী জড় সর্বস্ব মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে না তুলে সৃজনশীল মেধা সম্পন্ন সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞানমনস্ক, তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ, যুগোপযোগী একজন আধুনিক মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বিদ্যালয়ে নেয়া হয় বিভিন্ন কার্যক্রম। তারই ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গান, আবৃত্তি, সৃজনশীল মেধাঅন্নেষণ বিতর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রেখে চলেছে সাফল্যের সাথে।
বর্তমান সরকার নারী শিক্ষা প্রসারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সে সাথে খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও তথ্য প্রযুক্তিতে দিচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। তারই সাফল্যের ছোঁয়া আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ ও প্রযুক্তিগত ধারণা আমাদের শিক্ষার্থীদের ও শিক্ষকদের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করছে। যার ফলশ্রুতিতে তথ্য প্রযুক্তিতে অবদানের জন্য সিলেট এর মধ্যে সরকার কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার প্রাপ্ত হয়ে বিদ্যালয় তার সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছে।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিদ্যালয়ের বিষয়ানুগ, আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক, দক্ষ ও প্রযুক্তিতে দক্ষ, পরিশ্রমী শিক্ষক বৃন্দের তত্ত্বাবধানে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের দীপ্তিতে, ব্যক্তিত্বের সুষমায়, মানবিক চেতনায়, শানিত বৈদগ্ধে উদ্ভাসিত হয়ে দেশ ও দেশের আপামর মানুষের কল্যানে অর্থবহ অবদান রাখবে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মচারী সকলের মিলিত প্রয়াসে বিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা আরো সাফল্যময় হোক। আরো দীপ্তিময় হোক এ প্রত্যাশা রইলো। সকলের জন্য শুভকামনা।
অধ্যক্ষ : আমাদের শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মিসেস বাবলী পুরকায়স্থ একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক এবং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সুদক্ষ প্রশাসক। তিনি একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নকারী। তিনি অত্র বিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পর কোন কালক্ষেপন না করে শিক্ষার পরিবেশ ও মান উন্নয়নকল্পে বহুবিদ বাস্তবমূখী ও বিজ্ঞান সম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
ছাত্রী-শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সকলের চরম বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে তিনি পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপাতে প্রত্যেকটি কর্মসূচীকে সাফল্যমন্ডিত করতে সমর্থ হয়েছেন। বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার একটি আন্তরিক ও সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে এবং শিক্ষার গুনগত মান আশাতীত উন্নতি হয়েছে। তিনি একজন অকুতোভয় কর্মবীর। কোন প্রভাব এবং প্রতিকূলতাই তাকে তার নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।
শিক্ষকমন্ডলী: সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই এখানে সুযোগ্য ও সুদক্ষ শিক্ষকমন্ডলী পাঠদান করে আসছেন। বিদ্যালয়ে প্রভাতী ও দিবা শাখায় বর্তমানে সর্বমোট ৫১ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক (দিবা) জনাব মোঃ কবির খান এবং প্রভাতী শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন জনাব নাজমা বেগম (প্রভাতী)। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ শফিকুল হক বাদলী হওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূণ্য আছে।
বিদ্যালয়ে চালু প্রকল্প সমুহ: সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রকল্প চালু আছে। বিদ্যালয়টি ২০০৮ সাল থেকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের "Connecting Classrooms" প্রকল্পের অধীন যুক্তরাজ্যের চারটি এবং সিলেট শহরের চারটি বিদ্যালয়ের সাথে যৌথ কারিকুলাম প্রকল্পের অধীনে কারিকুলাম উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত আছে।
বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যগত সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জীবন দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে " Life Skill Based Education" প্রকল্পের কাজ চালু আছে। তাছাড়া " Secondary Education Sector Development Project" এর অধীনে ই-লার্নিং প্রকল্প এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে আইটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু আছে।
উপবৃত্তি: নারী শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ উপবৃত্তি প্রথা বিদ্যালয়ে চালু আছে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের মধ্যে ৭৫% উপস্থিথি ও ৪৫% নম্বরের ভিত্তিতে এ উপবৃত্তি দেওয়া হয়। উপবৃত্তির দায়িত্বে আছেন সহকারী শিক্ষক তরুণ কান্তি সরকার।
শেষান্তে এসে বলা যায় সৃষ্টির্কতার উপর প্রগাঢ় বিশ্বাস ও আস্থা রেখে এ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও শিক্ষগণের মধ্যে যে কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এ ধারা সুষমভাবে অব্যাহত থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে আমরা এ বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আর্দশ মানুষ তথা এদেশের সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কৃতিত্ব অর্জন করতে পারবো বলে আশা রাখি।
সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হউন। আমাদের মহতী প্রচেষ্টা ও সম্ভাবনার অগ্রযাত্রা সফল হোক এ প্রত্যাশা রেখে শেষ করছি।
বাংলাদেশ............